অবৈধ শ্রমিক ও মালিকদের ধরতে জঙ্গলেও অভিযান চালাবে মালয়েশিয়া!

অবৈধ শ্রমিক ও মালিকদের ধরতে মালয়েশিয়ার স্পেশাল বাহিনী কর্তৃক অভিযান চলছে। অব্যাহত অভিযানের ফলে গ্রেপ্তার আতঙ্কে বৈধরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর অবৈধরা আশ্রয় নিচ্ছেন জঙ্গলে । মালয়েশিয়ার প্রাণকেন্দ্র কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা পুডুরায়া হারিয়ে ফেলেছে সে তার সেই চিরচেনা ঐতিহ্য । কমে গেছে বাংলাদেশিদের আনাগোনা, যেন এক নিস্তব্ধ নগর । গ্রেফতার আতঙ্কে সবাই যেন নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে। পালিয়ে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের ধরে আগামী সেপ্টেম্বরে প্রয়োজনে জঙ্গলেও অভিযান পরিচালনা করা হবে হলে জানা গেছে।

চলতি বছরের জুলাই থেকে শুরু হওয়া মালয়েশিয়া অভিবাসন বিভাগের মেগা থ্রির অভিযানে ৩ হাজার ২৭০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ইমিগ্রেশন বিভাগ । এই অভিযানে ১ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অবৈধ শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগে এসময় ৬৪ জন মালয়েশিয়ান মালিককেও গ্রেফতার করা হয়েছে । আজ ১৯ জুলাই মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টের সংসদ সদস্য নুরুল ইজজাহ আনোয়ার এর এক প্রশ্নে ডেপুটি গভর্নর আজিজ জামান বলেন অভিযান ও গ্রেফতারের এসব তথ্য জানান ।

সংসদে জানানো হয়, সর্বমোট ৩৪ হাজার ৪২৬ গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হয় । ২০১৬ সাল থেকে এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ১৭৬ জন বিদেশি অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে । তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৩ হাজার ২৯৩ জন মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । আটক হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন ইন্দোনেশিয়ান ও বাংলাদেশি । এছাড়া অন্যান্য দেশের নাগরিকও রয়েছেন ।

এদিকে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের ব্যাপক ধরপাকড় অভিযানের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার একজন এমপি । গত কয়েক দিন আগে মালয়েশিয়ার ওই এমপি বলেন, বর্তমান অভিবাসন বিভাগ শ্রমিকদের সঙ্গে কুকুরের মতো আচরণ করছে যা বর্তমান সরকারের (পাকাতান হারাপান ) নীতি বা আদর্শ নয় ।

এদিকে চলমান অভিযানে অধিকাংশ নিয়োগকারী তাদের অবৈধ শ্রমিকদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শ্রমিকদের যার যার দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেক নিয়োগকারী এই প্রতিবেদককে জানান , বিগত দিনে শুধু শ্রমিকদের গ্রেফতার করা হতো কিন্তু বর্তমানে নিয়োগকারীকেও গ্রেফতার করা হচ্ছে। ফলে আমরা অবৈধ শ্রমিকদের যার যার দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছি । এ সমস্যা দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে । তাই আমরা আর কোন রিস্ক নিতে চাই না ।

এ বিষয়ে একজন ট্রাভেল এজেন্ট মালিকের সঙ্গে কথা হয়, তিনি জানান বর্তমানে প্রতিদিন আমাদের ট্রাভেল এজেন্ট থেকে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ জন মালয়েশিয়া ছাড়তে টিকিট কাটছে। যা বিগত দিনে ছিল না । অন্যদিকে অভিবাসন বিভাগের অভিযানে বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা বর্তমানে জঙ্গলে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে শুকনা খাবার নিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছে । আবার অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না ।

এ ব্যাপারে কথা হয় মালয়েশিয়ায়় অবস্থানরত বাংলাদেশি মুদি দোকানি মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে । পাহাং জেলার কুয়ান্তান শহরের আলী এই প্রতিবেদককে জানান , বিগত দিনে প্রতিদিন আমার দোকানে ২ থেকে ৩ হাজার মালাই রিংগিত ( ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা) বিক্রয় হতো বাংলাদেশি মালামাল । বর্তমানে অভিবাসন বিভাগের অভিযানে গ্রেফতার আতঙ্কে কোনো ক্রেতা আসেনা । কোনরকম ১০০ থেকে ২০০ মালাই রিংগিত (টাকা ২০০০ থেকে ৪০০০ টাকা) বিক্রয় হয়। বর্তমানে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভিডিও করে তা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে এবং পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন বিভাগের অভিযানে বাংলাদেশি মালিকানাধীন ওই দোকানগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।